প্রকাশিত: Tue, Dec 19, 2023 11:34 PM
আপডেট: Sat, Jun 28, 2025 11:04 AM

[১]রাজধানীতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে আগুন, মা-শিশুসহ নিহত চার

মাসুদ আলম: [২] ট্রেনটি নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে রাজধানীতে আসছিলো। বিমানবন্দর স্টেশন পার হওয়ার পর ভোর ৫টার দিকে আগুন লাগানো হয়। ঘটনার সময় অধিকাংশ যাত্রীই ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। আগুনে  ট্রেনটির ছ, জ, ঝ এই তিন বগি পুড়ে যায়। ট্রেনটিতে মোট ১৪টি বগি ছিল। জ বগি থেকে ৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। 

[২.১] তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেনটি থামানোর পর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ভোর ৫টা ১২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। ৬টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

[৩] ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনায় আহত নুরুল হক আবদুল কাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বলেন, তিনি যে বগিতে ছিলেন, সেই বগিতেই আগুনের সূত্রপাত হয়। বিমানবন্দর স্টেশন পার হয়ে বনানীর কাছাকাছি আসার পর ওই বগিতে আগুন লাগে।  ১০ সেকেন্ডের বগির ভেতরে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন ট্রেন অনেক গতিতে  চলছিল। ভিড়ে ঠাসা কামরায় দিগি¦দিক ছোটেন যাত্রীরা, হুড়োহুড়ির অনেকে লাফিয়ে পড়ে। তখনো ধোঁয়ার কারণে নিশ্বাস নিতে পারিনি। কাদের নিজেও নাখালপাড়া এলাকায়  ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়েন। 

[৪] তিনি আরও বলেন, আমার ধারণা  রেলের পোশাক পরা ব্যক্তিরাই ট্রেনে আগুন দিয়েছে।  অগ্নিকাণ্ডের আগে ওই ব্যক্তিরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে বগির মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল আর নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলো। আমার ধারণা, তারাই আগুন লাগিয়ে পাশের বগি দিয়ে পালিয়ে যায়।

[৫]  তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন যাত্রীদের বরাত দিয়ে জানান,  বিমানবন্দর স্টেশন পার হয়ে ট্রেনটি খিলক্ষেতে এলে যাত্রীরা বগিগুলোয় আগুন দেখতে পান। তারা চিৎকার করতে শুরু করেন। এরপর চালক ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে থামান। 

[৬] নিহতরা হলেন-  নাদিরা আক্তার পপি ও তার তিন বছরের শিশু ইয়াছিন রহমান। নিহত অন্য দুইজন পুরুষের পরিচয় জানা যায়নি। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা হবে।  

[৭] রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের ধারণা, দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে আগুন দিয়ে বিমানবন্দর স্টেশনেই নেমে গেছে। ওই এলাকার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ওই ট্রেনের সব যাত্রীর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

[৮] তেজগাঁও স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. পর্বত আলী বলেন, ট্রেনটি ৪টা ৫০ মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হয়। তেজগাঁও স্টেশনে এসে পৌঁছায় ৪টা ৫৪ মিনিটে। যেসব ট্রেন তেজগাঁও স্টেশনে থামে না সেগুলোর জন্য আমরা সবুজ বাতি জ্বালিয়ে পার হওয়ার সংকেত দেই। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের জন্যও সবুজ বাতি ধরা হয়েছিল। কিন্তু দেখি যে, ট্রেনের ইঞ্জিনের পেছনের বগির পর থেকে ধোঁয়া উঠছে। সঙ্গে সঙ্গে সবুজ বাতি পরিবর্তন করে লাল বাতি জ্বালিয়ে বিপৎসংকেত দিই। পাশাপাশি স্টেশন রুমে এসে কম্পিউটারের মাধ্যমেও সব সিগনাল বিপজ্জনক করে দিই। এতে ট্রেনটি স্টেশনের শেষ প্রান্তে থেমে যায়।  ৬টা ২৫ মিনিটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়।

[৯] ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ট্রেনের ভেতরে যারা ছিল তারাই আগুন দিয়েছে। প্রথমে একটি সিটে আগুন দেওয়া হয়। সেই আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

[১০] রেলওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক দিদার আহম্মদ তেজগাঁও রেলস্টেশন পরিদর্শনে এসে বলেন, কারা আগুন দিয়েছে, শিগগিরই এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

[১১] ট্রেনটি বর্তমানে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে রাখা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব